বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান আফগানিস্তান দেশে ঘুড়ি উড়ানো একটি বিনোদনমূলক খেলা - Bangladesh Bharat Pakistan Afganistan Deshe Ghuri Urano Ekti Binodonmulok Khela ১৭৪০ সালের দিকে নায়েবে নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঢাকায় ঘুড়ি উড়ানো উৎসব একটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়। তখন থেকেই আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে ঘুড়ি তৈরি শুরু হয়। বাড়ির ছাদ, খোলা মাঠ থেকে আকাশে অনেক ঘুড়ি উড়তে দেখা যায়। বর্তমানকালে বিনোদনের এতসব উপকরণ থাকা সত্ত্বেও ঘুড়ি উড়ানো একেবারে বন্ধ হয়ে তো যায়ইনি, বলা যায় ভালো রকমেই টিকে আছে।
বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান আফগানিস্তান দেশে ঘুড়ি উড়ানো একটি বিনোদনমূলক খেলা - Bangladesh Bharat Pakistan Afganistan Deshe Ghuri Urano Ekti Binodonmulok Khela |
ঘুড়ি উড়ানো, বিনোদনমূলক খেলা, Great Jokes, Free DownIoad images for gopal var, all natural jokes, ২১ ইঞ্চি, ১০টা কিস
ধারণা করা হয়, আজ থেকে প্রায় ২ হাজার ৮০০ বছর আগে চীনে ঘুড়ি উড়ানো শুরু হয়। পরবর্তীকালে এটি এশিয়ার অন্যান্য দেশ-- বাংলাদেশ, ভারত, জাপান এবং কোরিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও ইউরোপে ঘুড়ি উড়ানো খেলাটির প্রচলন ঘটে প্রায় ১৬শ’ বছর আগে। কাগজ দিয়েই সাধারণত ঘুড়ি বানানো হয়। এর ফ্রেম তৈরিতে ব্যবহার হয় বাঁশের কাঠি বা শক্ত অথচ নমনীয় কাঠ। এছাড়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে সুতা কিংবা পাতলা দড়ির ব্যবহার তো আছেই। আধুনিককালের ঘুড়িগুলোয় সিনথেটিক জাতীয় পদার্থের প্রচলনও রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত। কোনোটি আকারে খুব বড় ও দেখতে খুব সুন্দর। আবার কোনোটি আকারে খুবই ছোট, কিন্তু দ্রুত উড়তে পারে।
বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান আফগানিস্তান দেশে ঘুড়ি উড়ানো একটি বিনোদনমূলক খেলা - Bangladesh Bharat Pakistan Afganistan Deshe Ghuri Urano Ekti Binodonmulok Khela
ঘুড়ি উড়ানো একটি মজার খেলা হলেও বহু দেশে ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশে ঘুড়ি উড়ানো একটি বিনোদনমূলক খেলা। বাংলাদেশে, বিশেষ করে পুরনো ঢাকায় পৌষ মাসের শেষ দিন অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব পালন করা হয়। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান - ভারতবর্ষীয় এসব এলাকায় ঘুড়ি উড়ানোর বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতা বিভিন্নভাবে হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত হচ্ছে কাটাকাটি খেলা। তার মানে দুই ঘুড়ির সুতায় প্যাঁচ লাগিয়ে কে কার সুতা কেটে দিতে পারে তার প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতার জন্য কোনো পূর্বপ্রস্তুতি বা আয়োজনের দরকার হয় না। তবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য অবশ্যই প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের শহরে-গ্রামে সবসময় ছোটদের মধ্যে এই প্রতিযোগিতা লেগেই আছে। দেখা গেল কেউ একজন ঘুড়ি উড়াচ্ছে, অন্য একজন কাছাকাছি আরেকটি ঘুড়ি উড়াল। একটু পরেই দেখা যাবে এক ঘুড়ি তেড়ে যাচ্ছে অন্য ঘুড়ির দিকে। তারপর লেগে যায় তাদের মধ্যে প্যাঁচ। কিছুক্ষণ পরেই যে কোনো একটা ভোকাট্টা। মানে সুতা কেটে গেছে যে কোনো একটার। যে টিকে রইল, জিতে গেল সে। আর যারটা কেটে গেল, বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান আফগানিস্তান দেশে ঘুড়ি উড়ানো একটি বিনোদনমূলক খেলা - Bangladesh Bharat Pakistan Afganistan Deshe Ghuri Urano Ekti Binodonmulok Khela মন খারাপ করে নাটাইয়ে সুতা প্যাঁচাতে রইল সেই ঘুড়ির মালিক।
যে ঘুড়িটা ভোকাট্টা হল, সেটা নিয়েও আছে অন্যরকম এক প্রতিযোগিতা। ঘুড়ি ধরার প্রতিযোগিতা। কাটা ঘুড়ি বাতাসে টাল খেতে খেতে একসময় নিচে গিয়ে পড়ে। ছোট ছোট ছেলেরা আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকে কে ধরতে পারে সেই ঘুড়ি। যে ধরতে পারবে, কাটা ঘুড়ির মালিক সে। এও এক অন্যরকম আনন্দ, অন্যরকম মজা। আরেকরকম প্রতিযোগিতার বিষয় হচ্ছে কত উপরে ঘুড়ি উঠানো যায়। তবে যে প্রতিযোগিতাটি শুধু আমাদের দেশে নয়, সারাবিশ্বেই উৎসবের সঙ্গে আয়োজন করা হয়ে থাকে সেটা হল ঘুড়ির আকার-আকৃতি ও অলঙ্করণ নিয়ে প্রতিযোগিতা। অর্থাৎ কে কত চমৎকার ঘুড়ি বানাতে পারে তার প্রতিযোগিতা।
বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান আফগানিস্তান দেশে ঘুড়ি উড়ানো একটি বিনোদনমূলক খেলা - Bangladesh Bharat Pakistan Afganistan Deshe Ghuri Urano Ekti Binodonmulok Khela
বাংলাদেশের পুরনো ঢাকায় অনেক কাল আগে থেকেই ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতাটি হচ্ছে কাটাকাটি ধরনের। প্রতিযোগিতার নির্দিষ্ট দিনটির জন্য প্রতিযোগীদের মধ্যে আয়োজন চলতে থাকে অনেক দিন আগে থেকেই। লড়াই করার জন্য বানানো হয় বেশ কিছু নিখুঁত ঘুড়ি। তারপর চলে সুতায় ধার দেওয়ার পালা, যাকে বলা হয় মাঞ্জা দেওয়া। প্রথমে আঠা জাতীয় কিছু লাগানো হয় সুতায়। তারপর তার সঙ্গে মিলানো হয় মিহি করে বাটা কাচের গুঁড়া। সঙ্গে দেওয়া হয় সামান্য রং, যাতে দেখতেও সুন্দর লাগে সুতাটি। যে যত সুন্দর করে সুতায় ধার দিতে পারবে, সে-ই টিকে থাকবে এই প্রতিযোগিতায়। তারপর নির্দিষ্ট দিনে সবাই যার যার নাটাই-ঘুড়ি নিয়ে বাড়ির ছাদ বা খোলা মাঠে গিয়ে হাজির হয়। উড়তে থাকে হাজার হাজার ঘুড়ি। ঘুড়িতে ঘুড়িতে ভরে যায় পুরনো ঢাকার নীল আকাশ। চলে একটির সঙ্গে অন্যটির কাটাকাটি খেলা। আস্তে আস্তে কমতে থাকে আকাশে ঘুড়ির সংখ্যা। সবশেষে টিকে থাকে শুধু একটি। শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা এই ঘুড়িটিই বা ঘুড়ির মালিকই হয় বিজয়ী।
ঢাকাবাসীর উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লে গ্রাউন্ডে প্রতিবছর ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করা হয়। নানান রংয়ের, নানান আকৃতির শত শত ঘুড়ি সেদিন আকাশে উড়তে দেখা যায়। এসব ঘুড়ির কোনোটার নাম কালাপাহাড়, কোনোটার নাম লালপাহাড়, কোনোটা চুড়িদার, পেটকাটা, চুমকি, পঙ্খিরাজ, আবার কোনোটার নাম প্রজাপতি। অনেক সংগঠন এবং ব্যক্তি এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে থাকে।
বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান আফগানিস্তান দেশে ঘুড়ি উড়ানো একটি বিনোদনমূলক খেলা - Bangladesh Bharat Pakistan Afganistan Deshe Ghuri Urano Ekti Binodonmulok Khela
বাংলাদেশের গ্রামের লোকজন ধর্মীয় উৎসবের সময় ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। ঐতিহাসিক বিবরণ ও রেকর্ড থেকে জানা যায়, আঠারো এবং উনিশ শতকে ঢাকার অভিজাত লোকেরা ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতার টিমকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করতেন।
আমাদের দেশের অনেক এলাকায়ই ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। আর শুধু আমাদের দেশে কেন, চীন, জাপান ও পূর্ব এশীয় অন্যান্য দেশে শত শত বছর ধরে ঘুড়ি উড়ানো জনপ্রিয় একটি প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশসহ এশীয় দেশে শীত এবং গ্রীষ্মকালের শেষভাগে ঘুড়ি উড়ানোর খেলা প্রায় উৎসবের আকার নেয়।
শুধু সুন্দর আকৃতি আর দেখতে রংচঙা হলেই সুন্দর ঘুড়ি হয় না। বাতাসে ভেসে থাকার জন্য ঘুড়িকে যথাযথ আকার ও ওজনের তৈরি করতে হয়। নইলে ঠিকভাবে তা উড়বে না। ঘুড়ি সাধারণত দুই ধরনের-সুতাওয়ালা এবং সুতাবিহীন ঘুড়ি। সুতাওয়ালা ঘুড়ির মধ্যে আছে ঘুড্ডি, ঢাউশ, চং, চোঙা। আর সুতাবিহীন ঘুড়ি হল ফানুস, বেলুন, হাউই ইত্যাদি।
ঢাউশ শব্দ থেকে বোঝা যায় এটা বিশাল আকৃতির উপবৃত্তাকারের ঘুড়ি। আকাশে ওড়ার সময় দেখতে অনেকটা উড়ন্ত চিলের মতো লাগে বলে একে অনেক সময় চিলি বলা হয়। মাছ বা প্রজাপতির আকারেও ঘুড়ি বানানো হয়। বড় আকৃতির অন্য একটি ঘুড়ির নাম উড়োজাহাজ ঘুড়ি। এটি আকাশের অনেক উপরে ওড়ে। এই ঘুড়ি উড়ানোর জন্য শক্ত সুতার প্রয়োজন হয়। অন্য এক ধরনের ঢাউশ ঘুড়ি হল ঢোপ। এটি একটি ত্রিমাত্রিক আকাশযান এবং জেট বিমানের মতো ওড়ে। চং ঘুড়ি দেখতে অনেকটা ট্রাপিজিয়মের মতো, যার উপরের আর নিচের বাহু দুটি পরস্পর সমান্তরাল এবং উপরের বাহু নিচের বাহু অপেক্ষা ৯ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হয়। কিছু কিছু চং ঘুড়ি দেখতে ঠিক মানুষের মতো। তাই এটিকে মানুষ চং বলা হয়। এটি উড়ানো হয় রাতে এবং এর দুহাতে দুটি মশাল জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আর সেই মশালের আলোতে এটিকে দেখা যায় হেলেদুলে হাত-পা নেড়ে আকাশে উড়তে।
বিভিন্ন দেশে ঘুড়ির বিভিন্ন রকম নামকরণ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে চারকোনা আকৃতির বাংলা ঘুড়ি, ড্রাগন, বক্স, মাছরাঙা, ঈগল, ডলফিন, অক্টোপাস, সাপ, ব্যাঙ, মৌচাক, কামরাঙা, আগুনপাখি, প্যাঁচা, ফিনিক্স, জেমিনি, চরকি লেজ, পাল তোলা জাহাজ, জাতীয় পতাকা প্রভৃতি সব নামের ঘুড়ি বানানো হয়।
পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিনটিতে এই উৎসব পালন করা হয়। এই দিনে বাঙালি বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। তার মধ্যে পিঠা খাওয়া ও ঘুড়ি উড়ানো অন্যতম। সারাদিন ঘুড়ি উড়ানোর পরে সন্ধ্যায় পটকা ফুটিয়ে ফানুস উড়িয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
সুতাবিহীন ঘুড়ির মধ্যে অন্যতম হল ফানুস। ফানুস আসলে মুখখোলা বিরাট আকারের বেলুন। ফানুসের নিচের দিকে একটা প্রশস্ত মুখ থাকে, যা দেহের আয়তনের তুলনায় সরু। মুখটা খোলা থাকে এবং একটা খিল বৃত্তাকারে বাঁকিয়ে মুখটা গোল করে বানানো হয়। ফানুসের সমস্ত দেহ পাতলা কাগজ দিয়ে তৈরি করা হয়। ফানুসের মুখের নিচে লোহার একটা শিক ঝুলানো থাকে। ঝুলন্ত শিকটির মাঝখানে তুলা বা ন্যাকড়া জড়িয়ে তেল দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া হয়। উড়ানোর সময় ফানুস মশালের মতো শিখাসহ জ্বলতে থাকে আর উপরের দিকে উঠতে থাকে। ফানুস আকাশে কয়েক মাইল পর্যন্ত উড়ে থাকে।
ফানুস হোক আর কাগজের ঘুড়ি হোক, প্রতিযোগিতা হোক অথবা উৎসব হোক, সব ক্ষেত্রেই ঘুড়ি উড়ানো আসলে মজার এক খেলা।... বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান আফগানিস্তান দেশে ঘুড়ি উড়ানো একটি বিনোদনমূলক খেলা - Bangladesh Bharat Pakistan Afganistan Deshe Ghuri Urano Ekti Binodonmulok Khela
0 comments:
Post a Comment