দিকে ঘুর্নি নামের এক গ্রামে গোপাল
ভাঁড়ের জন্ম। নয় বছর বয়সে তার বাবা মারা যান।
গরীব বলে লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি।
কিন্তু অল্প শিক্ষা আর তার নিজের তীক্ষ্ণ
গোপালের রসিকতা ও বুদ্ধিমত্তার কথা |
বুদ্ধি ও প্রতিভার গুণেই তিনি আজও ছেলে-
বুড়ো সবার মনে রয়ে গেছেন। নদীয়ার
সম্রাট মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র নানা লোকের মুখে
গোপালের রসিকতা ও বুদ্ধিমত্তার কথা শুনে
তাকে রাজসভায় স্থান দিয়েছিলেন। সেই
থেকে গোপালের পরিচিতি চারিদিকে ছড়িয়ে
পড়ে। কথায় বলে নাপিতরা ধূর্ত হয়। গোপালরা
জাতিতে নাপিত ছিলেন। গোপাল অসম্ভব ধূর্ত
ছিলেন কিন্তু তাকে কখনোই নাপিত বলা চলে
না। তার অসম্ভব বুদ্ধিমত্তা তকে শ্রেষ্ঠ ভাঁড়
রূপে পরিচিতি দিয়েছে। তাই তিনি গোপাল ভাঁড়।]
গোপাল নন্দীগ্রামে যাবে শুনে গোপালের
প্রতিবেশী এক গোঁড়া বৈষ্ণব এসে গোপালকে
বলল, ‘নন্দীগ্রামের পরম বৈষ্ণব ত্রিলোচনের
ছেলে বটুকের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি।
তুমি যখন নন্দীগ্রামে যাচ্ছ তখন আমার জামাইয়ের
একটু খোঁজ নিও।
নিন্দুকেরা নানা কথা বলে কিন্তু আমার জামাইকে
তোমার খুবই ভালো লাগবে। গোঁড়া বৈষ্ণব বংশের
ছেলে। ভালো না হয়ে যায় কোথায়? অনেক
বেছে বেছেই তো মেয়েকে ওখানে
বিয়ে দিয়েছি।’
দিন সাতেক পরে গোপাল যখন নন্দীগ্রামে
থেকে ফিরে এল, সেই বুড়ো বৈষ্ণব ভদ্রলোক
তখন গোপালের কাছে জামাইয়ের খোঁজ নিতে
এল।
ওহে গোপাল, আমার জামাইয়ের সঙ্গে দেখা
হয়েছে?
দেখা হয়েছে বৈকি, আমি তো দিন সাতেক বলতে
গেলে আপনার জামাইয়ের ওখানে ছিলাম।
তাই নাকি? তবে তো ভালোভাবেই পরিচয় হয়েছে।
আমার জামাইকে তোমার কেমন লাগল গোপাল?
আপনার জামাইটি খুবই ভালো, তবে...
তবে কি গোপাল? গোঁড়া বৈষ্ণব ওরা।
একটু পেঁয়াজ খায় আর কি।
বলো কি গোপাল, পেঁয়াজ খায়? ওর বাবা গোঁড়া
বৈষ্ণব। বৈষ্ণবের ছেলে হয়ে পেঁয়াজ খায়?
রোজ কি খায় তাই বলে? এই মাঝে মাঝে খায়, যখন
একটু মাংস-টাংস খায়।
কি বলছ গোপাল, আমার জামাই মাংস খায়? বৈষ্ণব বংশের
ছেলে হয়ে মাংস খায়। এ যে আমি ভাবতেই পারছি না
একদম।
এতে ঘাবড়াবার কিছু নেই, রোজ কী আর মাংস খায়
নাকি? এই যখন একটু টানে তখনই খায়।
টানে মানে? সে তামাক খায় নাকি?
না তামাক নয়। গুরুজনের সামনে তামাক খাবে কি করে?
টানে মানে যখন একটু মদ টানে। তবে আপনার
জামাইয়ের বেশ জ্ঞানগম্যি আছে বৈকি। সবার সামনেই
কি আর মদ টানে, লুকিয়ে লুকিয়ে টেনে আসে।
কি বলছ গোপাল, আমার জামাই মদ খায়?
রোজ কি আর মদ খায় নাকি? এই যেদিন একটু এদিক-
ওদিক যায়, সেদিন কেবল খায়।
এদিক-ওদিক যায় মানে?
এই পাড়ায়-টাড়ায় যায়। বুঝলেন না-বেশ্যা পাড়ায়
মেয়েছেলেরা তো মোটেই ভালো নয়।
ওদের পাল্লায় পড়ে মাঝে মাঝে মদ টানতে হয়।
গোপালের কথাশুনে বৈষ্ণব ভদ্রলোক আর স্থির
থাকতে পারলেন না, অস্থিরচিত্তে বাড়ি ফিরে
গেলেন। তারপর আর গোপালের কাছে কখনও
জামাইয়ের খোঁজ নিতে আসেননি। নিজেও
জামাইবাড়িতে আর বেড়াতে যাননি।
0 comments:
Post a Comment